অনলাইন ডেস্কঃ মহামারী-পরবর্তী সময় থেকেই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। মূল্যস্ফীতির অভিঘাত, উচ্চ সুদহার, চীনের পুনরুদ্ধার গতিতে শ্লথতা ও বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্থর থাকায় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘ হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিশ্বব্যাংক। গত মঙ্গলবার দেয়া পূর্বাভাসে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে টানা তৃতীয় বছরের মতো বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি মন্থর থাকবে। খবর এপি।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থাকবে ২ দশমিক ৪, যা গত বছরে ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ। তারও আগে ২০২২ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ শতাংশ। মহামারীর কারণে ২০২০ সালের অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার পর ২০২১ সালে শক্তিশালী পুনরুদ্ধার দেখা গিয়েছিল। সে বছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
বৈশ্বিক সংঘাত নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে। বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, অনুন্নত দেশগুলো জলবায়ু সংকট ও দারিদ্র্য দূরীকরণে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্ডারমিট গিল বলেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধির হার প্রত্যাশার চেয়ে আশঙ্কাজনক কম থাকবে, যা ফাঁদে ফেলতে পারে উন্নয়নশীল ও বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোকে।’
মহামারীর অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি, বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজিরবিহীন সুদহার বৃদ্ধি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি জুনে দেয়া পূর্বাভাসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ বেশি বেড়েছে।
গত বছরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা বিশ্বব্যাংকের দেয়া পূর্বাভাসের তুলনায় বেশি। নতুন বছরে প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৬ শতাংশ থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২২ সালের মার্চের পর ১১ বার সুদহার বাড়িয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতিকে ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রায় নামিয়ে আনতে না পারলেও কাছাকাছি অবস্থানে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের সাথে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ
এদিকে উচ্চ সুদহারে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতিও কমতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি থাকবে ৩ দশমিক ৭, যা ২০২৫ সালে দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৪ শতাংশে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীন। বিশ্বব্যাংকের দাবি, চলতি বছরে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থাকবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমকি ৩ শতাংশ। এক বছর ধরে দেশটির অর্থনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোয় দেশটির আবাসন খাতে দেখা দিয়েছে টানাপড়েন। বাড়ছে তরুণদের বেকারত্বের হার। দেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর আকার বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়ার আশঙ্কা। আর চীনে অর্থনৈতিক শ্লথতার কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে উন্নয়নশীল দেশগুলোয়। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও চিলির মতো দেশগুলোর চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। চীনের বাজারে দক্ষিণ আফ্রিকা কয়লা ও চিলি তামা রফতানি করে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, ইউরো ব্যবহার করা ২০টি দেশে চলতি বছরে প্রবৃদ্ধির হার থাকবে দশমিক ৭ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। গত বছরে ব্লকের প্রবৃদ্ধি ছিল দশমিক ৪ শতাংশ। এদিকে আরেক বৃহৎ অর্থনীতি জাপানের প্রবৃদ্ধি থাকতে পারে দশমিক ৯ শতাংশ।
তথ্যসূত্র: বাসস
Leave a Reply